Thursday, 15 March 2018

Bauddha Philosophy Class in Bengali for HS Education | বৌদ্ধ দর্শন কি এবং এর প্রকারভেদ


বুদ্ধদেবের দার্শনিক মতবাদ হল বৌদ্ধ দর্শন। বুদ্ধদেবের বানীর সংকলনকে ত্রিপিটক বলা হয়। এই তিনটি পিটক হল সূত্র পিটক, বিনয় পিটক, অভিধর্ম পিটক। বুদ্ধদেব প্রধানত ছিলেন একটি ধর্মের প্রবর্তক, সংস্কারক এবং নীতিবিদ। মানুষকে দুঃখ নিবৃত্তির উপায় দর্শনই তাঁর লক্ষ্য ছিল। বোধিলাভের ফলে তিনি চারটি সত্য উপলব্ধি করেছিলেন। এই চারটি প্রধান উপদেশ “চার আর্য সত্য” ( Four Noble Truths ) নামে পরিচিত। চারটি আর্য সত্য হল-

১) দুঃখ (Suffering )
২) দুঃখ সমুদয় (The Origin of  Suffering )
৩) দুঃখ নিরোধ ( Removal  of Suffering )
৪) দুঃখ নিরোধ মার্গ ( The Way to the Removal  of Suffering)

১) দুঃখ (Suffering ) : বুদ্ধদেবের মতে জগত ও জীবন দুঃখময়। মানুষের জীবনে জরা, ব্যাধি, মৃত্যু, রোগ, শোক, অপ্রিয়সংযোগ, প্রিয়জন বিচ্ছেদ প্রভৃতি দুঃখ অবশ্যম্ভাবী। মানব জীবন কামনা, বাসনা দ্বারা পরিচালিত। এই কামনা বাসনা ও আসক্তির মূলে রয়েছে তৃষ্ণা বা কোনোকিছু পাওয়ার আকাঙ্খা। তৃষ্ণা চরিতার্থ হলে পরিনামে সুখ পাওয়া গেলেও অন্তে দুঃখ অবশ্যম্ভাবী। কারন সুখ নিয়ত পরিবর্তনশীল। সুখের অস্থায়িত্ব, সুখকে হারানোর যন্ত্রণা – এইসকল ভয় সুখকে নষ্ট করে এবং উদ্বেগের কারন হয়। তাই বুদ্ধদেব বলেছেন সবকিছুই দুঃখময় ( সর্বম্  দুঃখম্ )
২) দুঃখ সমুদয় (The Origin of  Suffering ) : আমরা বিনা কারনে দুঃখ ভোগ করিনা। দুঃখের কারন আছে। কারন কার্যমাত্রেরই কারন আছে। অকস্মাৎ কোন কার্যের উৎপত্তি হয় নাতাই দুঃখেরও কারন আছে। দুঃখের উৎপত্তির কারন অনুসন্ধান করে বুদ্ধদেব একটি কার্য-কারন শৃঙ্খলের অবতারণা করেন। এই কার্যকারণ শৃঙ্খল হল ১) অবিদ্যা – এর হতে উৎপন্ন হয় ২) সংস্কার (শুভ অশুভ কর্ম প্রবনতা) – এর হতে ৩) বিজ্ঞান (মাতৃগর্ভস্থিত প্রাথমিক চেতনা) – এর থেকে উৎপন্ন হয় ৪) নাম-রূপ বা দেহ মন – নাম রূপ হতে ৫) ষড়ায়তন (ছটি ইন্দ্রিয়) – ষড়ায়তন হতে ৬) স্পর্শ (ইন্দ্রিয় – বিষয় সংযোগ) – স্পর্শ হতে ৭) বেদনা (ইন্দ্রিয় – বিষয় সংযোগের ফলে উৎপন্ন সুখ দুঃখের অনুভূতি) – বেদনা হতে ৮) তৃষ্ণা ( কোনোকিছু পাবার আকাঙ্খা ) - তৃষ্ণা হতে ৯) উপাদান ( আসক্তি ) উপাদান হতে ১০) ভব ( জন্মের আকাঙ্খা) ভব হতে ১১) জাতি ( জন্ম) – জাতি হতে ১২) জরামরনাদি দুঃখ।

এই কার্যকারণ শৃঙ্খলের বারোটি অঙ্গতাই একে “ দ্বাদশ নিদান ” বলা হয়। এই শৃঙ্খলটিকে “ভবচক্র” বলা হয়। পরবর্তীকালে এই মতবাদ হতে প্রতীত্যসমুৎপাদ তত্ত্ব নিঃসৃত হয়েছে।

৩) দুঃখ নিরোধ ( Removal  of Suffering ) :  বুদ্ধদেব বলেন দুঃখের মূল কারন অবিদ্যা দূরীভূত হলে দুঃখের নিবৃত্তি সম্ভব। দুঃখের নিবৃত্তিকে বৌদ্ধ দর্শনে “নির্বাণ” বলাহয়। এই নির্বাণ শব্দের অর্থ জীবিত অবস্থায় মুক্তি লাভ। নির্বাণ লাভকারি ব্যাক্তিকে “অর্হৎ” বলা হয়।

৪) দুঃখ নিরোধ মার্গ ( The Way to the Removal  of Suffering) :   দুঃখ হতে নির্বাণ লাভের উপায় আছে। এই নির্বাণ লাভের যে মার্গ বা উপায় আছে তার ৮ টি অঙ্গ। একে “অষ্টাঙ্গিক মার্গ” বলাহয়। এগুলি হল ১) সম্যক্ দৃষ্টি ২) সম্যক্ সংকল্প ৩) সম্যক্ বাক 8) সম্যক্ কর্মান্ত ৫) সম্যক্ আজীব ৬) সম্যক্ ব্যায়াম ৭) সম্যক্ স্মৃতি 8) সম্যক্ সমাধি।
১) সম্যক্ দৃষ্টি : সত্যদৃষ্টি বা সত্য জ্ঞান কে সম্যক দৃষ্টি বলাহয়। আত্মা এবং জগৎ সম্পর্কে মিথ্যা জ্ঞান হল দুঃখের মূল কারন। জাগতিক বস্তুর প্রতি আসক্তি যে জন্ম এবং দুঃখের কারন – সে বিষয়ে জ্ঞানই সম্যক্ দৃষ্টি।
২) সম্যক্ সংকল্প : নির্বাণ লাভের জন্য সত্য জ্ঞান লাভই যথেষ্ট নয়সত্য জ্ঞান অনুযায়ী জীবন যাপন না করলে জ্ঞান বৃথা হয়ে পরে। তাই জ্ঞান অনুযায়ী বিষয়ের প্রতি আসক্তি, অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা পরিত্যাগ করার সঙ্কল্প গ্রহন করা প্রয়োজন।
৩) সম্যক্ বাক : এর অর্থ হয় বাক সংযমঅর্থাৎ সত্য ও প্রীতিপুর্ন কথাবলা, মিথ্যা বর্জন করা নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
8) সম্যক্ কর্মান্ত : এটি পঞ্চশীলের অন্তর্গত। অহিংসা অর্থাৎ হিংসা বর্জন, সত্য অর্থাৎ মিথ্যা ভাষণ বর্জন, অস্তেয় অর্থাৎ পরদ্রব্য হরণ বর্জন, ব্রহ্মচর্য পালন এবং মাদক দ্রব্য বর্জন
৫) সম্যক্ আজীব : এমন ভাবে জীবিকা অর্জনের প্রয়োজন জাতে পঞ্চশীল লঙ্ঘিত না হয়ে। জীবিকা অর্জনের জন্যও হিংসা করা, মিথ্যা বলা, মাদক দ্রব্য গ্রহণ ইত্যাদি চলবে না।
৬) সম্যক্ ব্যায়াম : এর অর্থ মানসিক ব্যায়াম। অর্থাৎ নির্বাণ লাভের জন্য মন থেকে যাবতীয় কুচিন্তা দূর করতে হবে এবং মনকে সৎ চিন্তার দ্বারা পরিপূর্ণ করতে হবে।
৭) সম্যক্ স্মৃতি : আত্মা বলে শাশ্বত সত্তা নেই। জগৎ ও জীবন পরিবর্তনশীল। দেহ মন অনিত্য। অর্থাৎ নিত্য বা অপরিবর্তনীয় বলে কোন কিছু হয় না। সবকিছুই নিয়ত পরিবর্তনশীল। এগুলি প্রতিনিয়ত স্মরণে রাখতেহবে।
8) সম্যক্ সমাধি : যা সত্য এবং কল্যাণকর তার নিয়ত অনুধ্যান, এবং কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রণ সমাধি লাভের পথকে সুগম করে। সমাধির ফলে প্রজ্ঞালাভ হয়

     সব শেষে অষ্টাঙ্গিক মার্গকে সংক্ষেপে শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞা রূপে বর্ণনা করা হয়এগুলি অনুশীলনের দ্বারা সাধক নির্বাণ লাভ করেন এবং অর্হৎ রূপে গণ্য হন।







** দর্শন সম্বন্ধে আরও বিশদে যানতে নিচের ভিডিও টিতে ক্লিক করুন এবং আমার এই ভিডিও টি ভালো লাগলে Like করুন, Share করুন এবং নিত্ত নতুন দর্শনের ভিডিও পেতে এই YouTube চ্যানেল টি Subscribe  করে পাসের Bell Icon টিতে press  করুন।

My Video URL : https://youtu.be/DkMPzU1x_JA

https://www.youtube.com/channel/UCaf-JhEn1l9pI3R-EZBS6GA




No comments:

Post a Comment

Bauddha Philosophy Class in Bengali for HS Education | বৌদ্ধ দর্শন কি এবং এর প্রকারভেদ

বুদ্ধদেবের দার্শনিক মতবাদ হল বৌদ্ধ দর্শন। বুদ্ধদেবের বানীর সংকলনকে ত্রিপিটক বলা হয়। এই তিনটি পিটক হল সূত্র পিটক, বিনয় পিটক, অভিধর্ম পিট...